হিমালয়ের কো'লঘেঁষে বাংলাদেশের সর্বোত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া। এই উপজেলার ১নং বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশ মানচিত্রের সর্বোত্তরের স্থান বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এই স্থানে মহানন্দা নদীর তীর ও ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় ১০ একর জমিতে ১৯৯৭ সালে নির্মিত হয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, নেপালের সাথে বাংলাদেশের পণ্য বিনিময়ও সম্পাদিত হয় বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্টে। সম্প্রতি এ বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সাথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটানের সাথেও এ বন্দরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র স্থলবন্দর যার মাধ্যমে তিনটি দেশের সাথে সুদৃঢ় যোগাযোগ গড়ে উঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এখানে খুব শিঘ্রই ভারতের সাথে ইমিগ্রেশন চালু হতে যাচ্ছে। এটি চালু হলে পঞ্চগড় জেলা পর্যটকদের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে।হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়ের বেশ কিছু সম্ভাবনার মাঝে তেতুলিয়া বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর অন্যতম।এই বন্দর সম্পূর্ণ চালু হলে শুধু তেতুলিয়া পঞ্চগড় নয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে।
বাংলাবান্ধা বন্দর ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরের সম্ভাবনার প্রথম যাত্রা সুরু হয় ০১/০৯/১৯৯৭ সালে তৎকালীন সরকার এর মাননীয় শিল্প মন্ত্রী তোফায়েল আহম্মদ এবং রাজকীয় নেপাল সরকার এর মাননীয় কৃষিমন্ত্রী চক্র প্রসাদ বাসতুলা বাংলাবান্ধা বন্দরে বাংলাদেশ-নেপাল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের শুভ উদ্বোধন করেন।বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জীবিত করে তুলতে পরবর্তীতে ২০১১সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাবান্ধায় বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং ভারতের তৎকালীন মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জী নিজ দেশে বন্দরের কার্যক্রম তথা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আলোকে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের উদ্বোধন করেন।
বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী স্থলবন্দরের সম্ভাব্যতা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যতগুলো স্থলবন্দর রয়েছে বাংলাবান্ধা ফুলবাড়ী স্থলবন্দর ভৌগলিক কারণে একটি ভিন্ন-মাত্রিক কিন্তু বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে নেপাল মাত্র ৬১কি,মি ভুটান মাত্র ৬৮কি,মি এবং চীন সীমান্ত মাত্র ২০০কি,মি দূরত্বে অবস্থিত।এই একটি বন্দর,যা ৫টি বন্ধু-প্রতিম দেশকে একই সূত্রে আবদ্ধ করতে পারে। ভারত বাংলাদেশের মধ্যে যতগুলো স্থলবন্দর রয়েছে,এত কাছে ভারতীয় শিলিগুড়ির ন্যায় এত বড় সমৃদ্ধ শহর আর নেই। বাংলাবান্ধা থেকে মাত্র ৫কি,মি দূরে অবস্থিত শিলিগুড়ি শহর।শৈত্য শহর দার্জিলিং এই বন্দর থেকে মাত্র ৫৮কি,মি অপরদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে উপজেলা শহর তেঁতুলিয়া দূরত্ব ১৮কি,মি পঞ্চগড় জেলা শহরের দূরত্ব মাত্র ৫৪ কি,মি রাজধানী শহর ঢাকার দূরত্ব ৬০০কি,মি।তেঁতুলিয়া পঞ্চগড় থেকে বাংলাদেশের সকল বিভাগীয় শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা চমৎকার। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত,পাট,ব্যাটারি কোমল,পানিয়,সাবান,বিস্কুট,চানাচুর,জুস,কাঁচ সহ বিভিন্ন দ্রব্য নেপালে রপ্তানি হচ্ছে এবং নেপাল থেকে মসুর ডালসহ অল্প সংখ্যক পণ্য আমদানি হচ্ছে। ২২ জানুয়ারি ২০১১তে ভারতের সাথে চালু হওয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের আওতায় পুরানো একটি এস,আর,ও বলে ভারত থেকে শুধু মাত্র বোল্ডর পাথর আমদানি শুরু হয়। পক্ষান্তরে এই বন্দর দিয়ে ভারতে টাঙ্গাইল শাড়ী,ফার্নিচার,কমল,পানিয়,চানাচুর সহ কিছু পণ্য ইতোমধ্যে রপ্তানি হয়েছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চালু হলে রংপুর বিভাগের লক্ষ লক্ষ মানুষ সহ বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক ভারত-গামী রোগী,পর্যটক,ব্যবসায়ীগণ উপকৃত হবেন।অপরদিকে নেপাল,ভুটান,দার্জিলিং, গ্যাংটক,ডুয়ার্স ভ্রমণকারী পর্যটক গণ অনায়াসে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে বাংলাদেশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস